অংশীদারি সংলাপে বাংলাদেশকে তিন বার্তা যুক্তরাষ্ট্রের

Published On Mar 27, 2022

সৌজন্যঃ সাপ্তাহিক ঠিকানা 

টালমাটাল ভূ-রাজনীতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। একদিকে কোভিড মহামারির প্রভাব, অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এ ছাড়া চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাববলয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অস্বস্তির বিষয়ও রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে গত ২০ মার্চ রোববার ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারি সংলাপে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে পৃথিবীর অন্যতম পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র। বেলা ১১টা ২০ মিনিটে জাতীয় গেস্ট হাউস পদ্মায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অংশীদারি সংলাপ শুরু হয়। সংলাপ চলাকালীন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের খুঁটিনাটি আলোচনা করেন, যার মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তাবিষয়ক সহযোগিতার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল। একই সঙ্গে বাংলাদেশে অস্ত্র বিক্রি করতে জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্টের (জিসোমিয়া) খসড়া হস্তান্তর করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
সংলাপের সূচনা বক্তব্যে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনীতি-বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড জানান, ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে নিয়ে ‘একযোগে’ কাজ করতে চায়। তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের ফলে যখন গণতন্ত্র ও আন্তর্জাতিক আইন হুমকির মুখে, তখন বাংলাদেশকে নিয়ে আমরা একসাথে কাজ করতে চাই।’
যুক্তরাষ্ট্রের তিন বার্তা : বৃহৎ ইন্দো-প্যাসিফিক ক্যানভাসের মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয়ত, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে চুপ থাকবে না দেশটি এবং এ জন্য যদি সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তবু। তৃতীয়ত, ইউক্রেন ইস্যুতে আসলে কী ঘটছে, সেটি বাংলাদেশ জানে বলে বিশ্বাস করে যুক্তরাষ্ট্র এবং দেশটি যে ধরনের সমাজব্যবস্থা চায় তার বিকল্প নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে রাশিয়া।
এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারি সংলাপ সাধারণ কোনো ইভেন্ট নয়, বরং ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশ যে নেভিগেট করে, সেটির উপাদান এখান থেকে পাওয়া যায়। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র এবং তাদের নীতি বাংলাদেশের মতো ছোট দেশগুলোকে প্রভাবিত করে। এই প্রেক্ষাপটে কীভাবে ভারসাম্য রেখে এগোনো যায়, বিশেষ করে বর্তমান টালমাটাল ভূ-রাজনীতির অবস্থায়, তার একটি সুস্পষ্ট ধারণা এখান থেকে পাওয়া যায়। এ ধরনের ডায়ালগে যুক্তরাষ্ট্র কী চায় এবং তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে এবং উল্টো দিকে বাংলাদেশও তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে।
র‍্যাবের কার্যক্রমে উন্নতি, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি জটিল : র‍্যাব ও সংস্থাটির সাত কর্মকর্তার ওপর আরোপ করা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি বেশ জটিল বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড। নুল্যান্ড বলেন, ‘আমরা গত তিন মাসে র‍্যাবের কার্যক্রমে উন্নতি দেখতে পেয়েছি।’ ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-মার্কিন অষ্টম অংশীদারি সংলাপের পর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। তিনি আরও বলেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার একটি জটিল বিষয়। তবে বাংলাদেশ সরকার বিষয়টি উত্থাপন করেছে। তারা এ বিষয়ে কী কী উদ্যোগ নিয়েছে তা জানিয়েছে এবং র‍্যাবের কার্যক্রমের আরও উন্নয়নের জন্য কী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, তা আমাদেরকে দেখিয়েছে। আগামী দিনগুলোতে আমরা এই বিষয় নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখব।
সংলাপ শেষে যা বললেন পররাষ্ট্রসচিব : সংলাপ শেষে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, র‌্যাব ও তার সংশ্লিষ্টদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আমরা গভীর উদ্বেগ জানিয়েছি। বৈঠকে উভয় পক্ষ কিছু বিষয়ে একে অপরকে ভালোভাবে বোঝা এবং নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করার সুযোগ পেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এটা ব্যাখ্যা করেছি, কীভাবে এই নিষেধাজ্ঞা সরকারের সন্ত্রাসবাদ ও আন্তরাষ্ট্রীয় অপরাধ মোকাবিলা কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং পাশাপাশি চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় সরকারের উদ্যোগের বিষয়েও বিস্তারিত জানিয়েছি। এ ক্ষেত্রে আলোচনা অব্যাহত রাখতে চাই আমরা। পররাষ্ট্রসচিব আরও বলেন, আমাদের আলোচনা হয়েছে। র‌্যাব ও এর কার্যক্রমের পাশাপাশি আমাদের নেওয়া কিছু উদ্যোগের বিষয় উল্লেখ করে আমরা একটি নন-পেপার ডোশিয়ার হস্তান্তর করেছি। তারা এটা নিয়ে যাবে এবং দেখবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ে আমরা আলোচনা চালিয়ে যাব এবং আশা করি এই বিষয়টা সময়মতো সমাধান হবে।
উল্লেখ্য, সংলাপে অংশ নিতে গত ১৯ মার্চ শনিবার ঢাকায় আসেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড। ছয় সদস্যের একটি দলের নেতৃত্ব দেন তিনি। সফর শেষে ২১ মার্চ সোমবার নয়াদিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন যুক্তরাষ্ট্রের এ কূটনীতিক প্রতিনিধি দল। এর আগে সর্বশেষ ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সপ্তম সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক সংলাপে মূলত উভয় দেশের মধ্যে সব ইস্যুতে খোলামেলা আলোচনা হয়।