নৌকা ৪ ॥ বিদ্রোহী ৪ ॥ বিএনপি ৩ ॥ স্বতন্ত্র ২ জন নির্বাচিত ॥ নবীগঞ্জে নৌকার ভরাডুবি
Published On Nov 29, 2021
এটিএম সালাম/মোঃ আলমগীর মিয়া, নবীগঞ্জ থেকে ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া উৎসব মূখোড় পরিবেশে শান্তিপুর্ণভাবে ভোট গ্রহন সম্পন্ন হয়েছে। রবিবার (২৮ নভেম্বর) সকাল ৮ ঘটিকা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন চলাকালীন সময়ে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে বিজিবি, র্যাব, পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা কঠোর অবস্থানে ছিলেন। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, এডিশনাল এসপি, সার্কেল এসপি (বাহুবল)। হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান ও পুলিশ সুপার এস এস মুরাদ আলী নবীগঞ্জের বেশ কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। উপজেলার সর্বত্র নিরাপত্তা চাদরে ছিল ঢাকাঁ। নির্বাচনে সহিংসতা এড়াতে মোবাইল টিমের পাশাপাশি দায়িত্বে ছিলেন স্ট্রাইকিং ফোর্স। কুর্শি ইউনিয়নের গহরপুর সেন্টারে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ব্যালট পেপার যথা সময়ে না পৌছায় ভোটারদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। পরে সকাল ১১টায় ওই কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌছার পর ভোট গ্রহন শুরু হয়। বেলা ৩টার দিকে বাউসা ইউপির রিফাতপুর সরকারী প্রাইমারী কেন্দ্রে জাল ভোট প্রদানকে কেন্দ্র করে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের সর্মথকরা লাটি সোটা নিয়ে নৌকার প্রার্থীর সর্মথকদের উপর হামলার চেষ্টা করে। এ সময় আইনশৃংখলা বাহিনীর কঠোর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে। এছাড়া গজনাইপুর ইউপির শতক প্রাইমারী স্কুল কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থী মোঃ সেলিম মিয়া (ফুটবল) প্রতীক’কে বিজয়ী ঘোষনা করা হয়। এ সময় বিদ্যুৎ চলে যায়। বিদ্যুৎ আসার সাথে সাথে রেজাল্ট পরিবর্তন করে অপর মেম্বার প্রার্থী মোঃ ছালিক মিয়া (টিউবওয়েল) প্রতীককে বিজয়ী ঘোষনা করা হয়। এ সময় ফুটবল প্রতীকের এজেন্ট স্বাক্ষর না দিলে জোরপুর্বক তাকে মারধর করে স্বাক্ষর নেয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন মোঃ সেলিম মিয়া। আহত ব্যক্তিকে নবীগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাউসা ইউপির ১নং সংরক্ষিত আসনের প্রার্থী বর্তমান মহিলা মেম্বার আশিকুল বেগম বদরদী প্রাইমারী স্কুল, পাইকপাড়া প্রাইমারী স্কুল কেন্দ্রে কারচুপির অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, তার সুনিশ্চিত বিজয়কে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। তিনি পুণঃরায় ভোট গণনার দাবী জানান। এছাড়া উপজেলার কোথায়ও কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায় নি। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে ৪টিতে নৌকা, ৪টি বিদ্রোহী, বিএনপির সমর্থিত ৩টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ২টিতে বেসরকারী ভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তারা হলেন, ১নং বড় ভাকৈর (পশ্চিম) ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী রঙ্গলাল দাশ (ঘোড়া)। তার প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ২০৬। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি নৌকার প্রার্থী সমর দাশ পেয়েছেন ২ হাজার ৯৪০ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান সত্যজিৎ দাশ (চশমা) পেয়েছেন ২ হাজার ২৮৫ ভোট। ২নং বড় ভাকৈর (পুর্ব) ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে আক্তার মিয়া ছুবা বিজয়ী হয়েছেন। তার প্রাপ্ত ভোট ৩ হাজার ৬০১। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বিদ্রোহী প্রার্থী প্যানেল চেয়ারম্যান খালেদ মোশারফ পেয়েছেন ৩ হাজার ৪২৪ ভোট। সাবেক চেয়ারম্যান বিদ্রোহী প্রার্থী মেহের আলী মালদার (আনারস) পেয়েছেন ৩ হাজার ১২০ ভোট। ৩নং ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিদ্রোহী প্রার্থী নোমান আহমদ (ঘোড়া) বিজয়ী হয়েছেন। তার প্রাপ্ত ভোট ৬ হাজার ৭৭০। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি অপর বিদ্রোহী ছায়েদ উদ্দিন (মোটরসাইকেল) পেয়েছেন ৪ হাজার ৮১২ ভোট। নৌকার প্রার্থী আছাবুর রহমান পেয়েছেন ১ হাজার ৫৮২ ভোট। ৪নং দীঘলবাক ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আবু সাঈদ এওলাকে হারিয়ে বিজয়ী হন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা মোঃ ছালিক মিয়া (আনারস)। তার প্রাপ্ত ভোট ৩ হাজার ৯৮৫। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বর্তমান চেয়ারম্যান ও নৌকার প্রার্থী আবু সাঈদ এওলা পেয়েছেন ৩ হাজার ৪৬০ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ আব্দুল গফ্ফার ৩ হাজার ৪০৫ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউপি বিএনপি সভাপতি আব্দুল বারিক রনি পেয়েছেন ২ হাজার ৪৯৬ ভোট। ৫নং আউশকান্দি ইউনিয়নে নৌকার মনোনীত প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান দিলাওর হোসেন বিজয়ী হয়েছেন। তার প্রাপ্ত ভোট-৬ হাজার ৭২৫। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র প্রার্থী মোফাজ্জুল হক (চশমা) পেয়েছেন ৩ হাজার ৭৫৯ ভোট। ৬নং কুর্শি ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা সৈয়দ খালেদুর রহমান খালেদ (আনারস) বিজয়ী হয়েছেন। তার প্রাপ্ত ভোট-৫ হাজার ৫৯। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল মুকিত (চশমা) পেয়েছেন ৪ হাজার ৫০১ ভোট। নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আলী আহমদ মুছা পেয়েছেন ৩ হাজার ২৩৮ ভোট। ৭নং করগাও ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী আওয়ামীলীগ থেকে বহিস্কৃত নির্মলেন্দু দাশ রানা বিশাল ভোটের ব্যবধানে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। তার প্রাপ্ত ভোট-৭ হাজার ৭২৬। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মোঃ ছাইম উদ্দিন (আনারস) পেয়েছেন ৬ হাজার ৯১ ভোট। ওই ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী বজলুর রহমান পেয়েছেন ১ হাজার ৬৫৬ ভোট। ৮নং নবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নে প্রথম বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন নৌকার প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব। তার প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৪৩৪। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বর্তমান চেয়ারম্যান বিদ্রোহী প্রার্থী জাবেদুল আলম চৌধুরী সাজু (আনারস) পেয়েছেন ৩ হাজার ৫০৪ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা জাকির হোসেন চৌধুরী পেয়েছেন ২ হাজার ১৪৩। ৯নং বাউসা ইউনিয়নে প্রথমবারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি নেতা সাদিকুর রহমান শিশু (আনারস)। তার প্রাপ্ত ভোট ৬ হাজার ২০৪। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বিদ্রোহী প্রার্থী জুনেদ চৌধুরী (ঘোড়া) পেয়েছেন ৫ হাজার ১০৪ ভোট। নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আবু সিদ্দীক পেয়েছেন ৩ হাজার ৯১৯ ভোট। ১০নং দেবপাড়া ইউনিয়নে প্রাক্তন চেয়ারম্যান মরহুম এডভোকেট জাবেদ আলীর পুত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ রিয়াজ নাদির সুমন চশমা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার প্রাপ্ত ভোট ৫হাজার ৯৬০। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল মুহিত চৌধুরী পেয়েছেন ৩ হাজার ৫৮৪ ভোট। ওই ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের বর্ষিয়ান নেতা প্রাক্তন মন্ত্রী মরহুম দেওয়ান ফরিদ গাজী এবং বর্তমান এমপি দেওয়ান শাহ নওয়াজ মিলাদ গাজী’র জন্ম স্থানে নৌকার ভরাডুবিতে আলোচনার ঝড় বইছে। ১১নং গজনাইপুর ইউনিয়নে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন সদ্য বহিস্কৃত বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বিদ্রোহী প্রার্থী ইমদাদুর রহমান মুকুল (আনারস)। তার প্রাপ্ত ভোট ৬ হাজার ৮৮৪। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপি নেতা সফিউল আলম বজলু (চশমা) পেয়েছেন ৪ হাজার ৫৫৯ ভোট। নৌকার প্রার্থী সাবের হোসেন এর প্রাপ্ত ভোট ১ হাজার ৯৭১। স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা আবুল খয়ের কায়েদ (ঘোড়া) পেয়েছেন ৪৫৩ ভোট, হাফেজ মোঃ আইয়ুব আলী (অটো রিক্সা) পেয়েছেন ৬৬ ভোট। ১২নং কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান এমদাদুল হক চৌধুরী (আনারস)। তার প্রাপ্ত ভোট-৩ হাজার ৬১৭। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম (ঘোড়া) পেয়েছেন ২ হাজার ৮৩৪ ভোট, আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ফরহাদ আহমেদ (নৌকা) পেয়েছেন ২ হাজার ৩৫৭ ভোট। ১৩নং পানিউম্দা ইউনিয়নে বিপুল ভোটের ব্যবধানে ৬ষ্ট বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান নৌকার প্রার্থী ইজাজুর রহমান। তার প্রাপ্ত ভোট-৭ হাজার ৩৫৮। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিদ্রোহী প্রার্থী মুহিবুর রহমান মামুন (আনারস)। পেয়েছেন ৫ হাজার ৫৩৪ ভোট। এদিকে এবারের নির্বাচনে নৌকার বিশাল ভরাডুবি হওয়ায় নবীগঞ্জে ব্যাপক আলোচনার জন্ম নিয়েছে।
এছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহ নওয়াজ মিলাদ উপজেলার ১৩ ইউনিয়নে বিজয়ী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী, বিদ্রোহী প্রার্থী, বিএনপি প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ীদের তার ফেসবুক আইডিতে অভিনন্দন জানিয়েছেন।