হবিগঞ্জে চন্দ্রনাথ স্কুলের পুকুরটি ভরাট হচ্ছে, বাপা প্রতিনিধি দলের পরিদর্শন/পৌরসভা বহুতল ভবন চায়

Published On Apr 17, 2022

এক সময় হবিগঞ্জ শহরকে পুকুরের শহর বলা হত। শহর এবং আশপাশের এলাকায় পুকুরই ছিল খাবার পানির উৎস। বর্তমানে দখল-ভরাট, দূষণ এবং যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে গেছে অনেক পুকুর। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভুগর্ভস্থ পানির অবনমন এবং বৃষ্টি মৌসুমে জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করছে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে, যে পুকুর, দখলভরাট হয়ে গেছে সেগুলোকে পুনরায় খনন ও সংরক্ষণ করে নাগরিক সুবিধার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। কিন্তু তা না করে হবিগঞ্জ শহরে চন্দ্রনাথ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে, যা কোনোক্রমেই সমীচীন নয়।

শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর একটি প্রতিনিধি দল হবিগঞ্জের চন্দ্রনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন পুকুর পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে বাপা নেতৃবৃন্দ দেখতে পান পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে বলে জানান এলাকাবাসী।

বাপা কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিলের নেতৃত্বে পরিদর্শনে ছিলেন, বাপা হবিগঞ্জের সভাপতি অধ্যাপক মো: ইকরামুল ওয়াদুদ, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল, তাহমিনা বেগম গিনি, সাবেক ছাত্রনেতা সাংবাদিক আমেরিকা প্রবাসী মুজাহিদুল ইসলাম আনসারী, বাপা হবিগঞ্জের কোষাধ্যক্ষ শোয়েব চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল, সদস্য আব্দুল হান্নান, এডভোকেট শায়লা খান, গ্রীন ভয়েস এর মোনসেফা তৃপ্তি, আমিনুল ইসলাম, তারেক রায়হান প্রমুখ। এছাড়াও পরিদর্শন চলাকালে পরিবেশ অধিদপ্তর হবিগঞ্জের পরিদর্শক মুমিনুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করেন।

বাপা কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, জলাবদ্ধতা ও ভূগর্ভস্থ পানি সংকটে বিপর্যস্ত হবিগঞ্জ পৌরসভার চন্দ্রনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন পুকুর ভরাটের উদ্যোগ একটি নিন্দনীয় ও বেআইনি ঘটনা। দেশের সকল পৌর এলাকার পুকুর ও প্রাকৃতিক জলাধার পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের আইনী ও নীতিগত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষে এই পুকুরকে ঘিরে দৃষ্টিনন্দন জনকল্যাণকর উদ্যোগ গ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে। শুনা যায়, এই পুকুরের সাথে বঙ্গবন্ধু পরিবারেরও স্মৃতি বিজড়িত রয়েছে। আমরা অবিলম্বে পুকুরটি ভরাট কাজ বন্ধ করে তা পুনরুদ্ধার ও যথাযথ সংরক্ষণের দাবি জানাই।

এদিকে হবিগঞ্জ পৌরসভার মালিকানায়, বেদখল হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে দীর্ঘদিনের অবহেলিত চন্দ্রনাথ পুকুরের জায়গা উদ্ধার করেছে হবিগঞ্জ পৌরসভা। সম্প্রতি হবিগঞ্জ পৌরসভার মাসিক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই পুকুরের জমি উদ্ধার করার উদ্যোগ নেয়া হয়।
মাস্টার কোয়ার্টার এলাকায় হবিগঞ্জ পৌরসভার নিজস্ব ৬৫ শতক ভূমিতে অবস্থিত চন্দ্রনাথ পুকুর। পৌরসভার উদাসীনতার কারণে এই পুকুরে দীর্ঘদিন ধরে একটি মহল মাটি ভরাট করে নিজেদের দখলে নিয়ে যাচ্ছে। পুকুরের পূর্বপাড়ে রয়েছে দোকানপাট। এই দোকানগুলোও পুকুরের জমিতে অবস্থিত। বস্তুতঃ পুকুরের বিভিন্ন পাড়ে মাটিফেলে যে যার মতো করে মাটি ভরাট করে পুকুরের আকৃতিকে সংকুচিত করে ফেলেছেন। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত এই পুকুরের প্রতি উদাসীনতা দেখানোর ফলে পুকুরের জমি প্রায় বেদখল হওয়ার পথে ছিল। এমতাবস্থায়, পৌর মেয়র আতাউর রহমান সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পৌর পরিষদের মাসিক সভায় এই পুকুরের জমি উদ্ধারের সিদ্ধান্ত হয়। সাথে সাথে পৌরসভার উন্নয়নের স্বার্থে ও আয়বৃদ্ধির জন্য উক্ত স্থানে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণেরও সিদ্ধান্ত হয়। সভায় বক্তারা বলেন এই বহুতল ভবন নির্মাণে পৌরসভা যেমন অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবে ঠিক তেমনি হবিগঞ্জ শহরের ব্যবসা-বাণিজ্যেও উন্নয়ন সাধিত হবে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পৌরসভা ওই পুকুরের জমি উদ্ধার ও মাটি ভরাটের কাজ শুরু করে।