বিমানবন্দরে অব্যবস্থাপনা
Published On Dec 12, 2021
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজের জন্য হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাতে আট ঘণ্টা ফ্লাইট বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে। কিন্তু শুরুতেই বিশৃঙ্খলায় সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে যাত্রীদের। অনেক ফ্লাইট বিলম্বে ছেড়েছে, আবার কিছু যাত্রী ফ্লাইট ধরতেও পারেননি।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এর আগে জানিয়েছিল, রাত ১২টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত উড্ডয়ন–অবতরণ বন্ধ রাখা এবং ফ্লাইটসূচি পুনর্বিন্যাস করা হলেও অসুবিধা হবে না। বিমানবন্দরের সব কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই যাতে চালানো যায়, সে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু যাত্রী বিশৃঙ্খলা ও ভোগান্তির চিত্রই বলে দিচ্ছে এ ক্ষেত্রে পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতি রয়েছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, আট ঘণ্টা বিমান চলাচল বন্ধ রাখার কারণে সব এয়ারলাইনস ফ্লাইটসূচি পুনর্বিন্যাস করেছে। ফলে একসঙ্গে অনেক যাত্রী আসছে। এতে ইমিগ্রেশন বিভাগে যেমন চাপ বাড়ছে; চাপ পড়ছে চেক-ইন কাউন্টার, মালামাল আসার বেল্টে ও নিরাপত্তা তল্লাশির ক্ষেত্রেও। মালামাল নেওয়ার ট্রলি পেতেও যাত্রীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। আবার বিমানবন্দরে করোনার পরীক্ষা করে ফল পেতেও যাত্রীদের সময় লাগছে। এ ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনার চিত্র পাওয়া যায় দুবাইগামী যাত্রী মো. রকিব মিয়ার ভাষ্যে। তিনি বলেন, ‘কোথাও কোনো নির্দেশনার কথা লেখা নেই। দুপুর থেকেই কোথায় পরীক্ষা করব, কই যাব এসব খুঁজে পেতে অনেক সময় নষ্ট হয়েছে।’
বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত ট্রলি না থাকায় যাত্রীদের ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুরেও টার্মিনালের ভেতরে ও বাইরে ট্রলি ফাঁকা না পেয়ে অনেক যাত্রীকে মাথায়, হাতে ব্যাগ বহন করতে হয়েছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এক সপ্তাহ আগে ট্রলি মেরামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। আট ঘণ্টা ফ্লাইট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এক মাস আগে। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে, কর্তৃপক্ষ কেন ট্রলি মেরামতের জন্য এমন একটা সময়কে বেছে নিল, যখন কম সময়ের মধ্যে বেশি যাত্রীর চাপ সামলাতে হচ্ছে? এটা আগে থেকে পরিকল্পনা না করা এবং অব্যবস্থাপনার একটা দৃষ্টান্ত।
জনবলসংকট অব্যবস্থাপনা আরও তীব্র করেছে। বিমানবন্দরসংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের। চেক-ইন কাউন্টারের সেবা ও যাত্রীদের মালামাল উড়োজাহাজে তোলা ও নামানোসহ যাত্রীসেবা এবং বিভিন্ন বিমান সংস্থার বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম এ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের অধীন। কিন্তু বিমানের এ কাজের জন্য এমনিতেই পর্যাপ্ত জনবল নেই। এখন রাতের ফ্লাইট দিনে ও সন্ধ্যায় নিয়ে আসায় চাপ আরও বেড়েছে। কিন্তু গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জনবল বাড়ানো হয়নি। উল্টো আগে অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা (ওভারটাইম) কাজের জন্য ভাতা দিয়ে যে কাজ করানো হতো, বিমান কর্তৃপক্ষ সেটা এখন বন্ধ করে দিয়েছে।
করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে বিশ্বে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি বাড়ছে। মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার ধীরে ধীরে খুলছে। বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় বিমানবন্দর দিয়ে দেশি ও বিদেশি যাত্রীর যাতায়াত বাড়ছে। আবার শাহজালাল বিমানবন্দরের গতিশীলতা ও সক্ষমতা বাড়াতে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তাই বলে বিমানবন্দরে অব্যবস্থাপনা ও ভোগান্তি কাম্য নয়। এটা প্রবাসী ও বিদেশি নাগরিকদের কাছেও নেতিবাচক বার্তা দেবে। বিমানবন্দরের যে অব্যবস্থাপনা, সেটা পরিকল্পনাহীনতা, সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও জনবলের ঘাটতির কারণে সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় স্বার্থকে বিবেচনায় রেখে এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।