বিদ্যুৎখাতে সারা দেশের সাথে হবিগঞ্জের চিত্র সাংঘর্ষিক -যুগ্ম সচিব মাহমুদুল কবির মুরাদ
Published On Dec 11, 2021
দিদার এলাহী সাজু \ দৈনিক হবিগঞ্জ সমাচার
হবিগঞ্জের সাবেক জেলা প্রশাসক, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মাহমুদুল কবির মুরাদ বলেছেন, ‘সারা দেশের বিদ্যুৎখাতের সাথে হবিগঞ্জের চিত্র সাংঘর্ষিক। এখানে আকাশ মেঘলা কিংবা একটুখানি বাতাস হলেই বিদ্যুৎ ঊধাও হয়। সিস্টেম লসও অনেক বেশি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় খুজে বের করতে হবে। বাড়াতে হবে কর্মদক্ষতা ও জনবল।’ গতকাল শুক্রবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে হবিগঞ্জ জেলার বিদ্যুৎ পরিস্থিতি বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মাহমুদুল কবীর মুরাদ বলেন, ‘গ্রাহকের সেবার মান আরও বাড়াতে হবে। কাজ করতে হবে পরিকল্পনা অনুযায়ী। ভুতুড়ে বিল কেন আসছে তা খুজে বের করতে হবে। তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণ জোরদার করতে হবে। প্রয়োজনে কমিয়ে আনতে হবে ফিডারের আয়তন।’ নবীগঞ্জে গ্রীড সাব-স্টেশন স্থাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি হবিগঞ্জ শহরবাসীর কোন কাজে আসবে বলে আমার মনে হয় না। হবিগঞ্জ শহরে গ্রীড সাব-স্টেশন স্থাপন করা যায় কি-না সেটি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে হবে।’ হবিগঞ্জ শহরে জি.আই.এস সাব-স্টেশন নির্মাণে দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সাব-স্টেশনটি চালু করতে এত সময় লাগবে কেন? নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রয়োজনে জনবল ও বাজেট বাড়িয়ে দ্রুত কাজ সমাপ্ত করতে হবে।’ নির্বাহী প্রকৌশলীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘রক্ষণাবেক্ষণখাতে কত টাকা বাজেট হল, কোথায় কিভাবে ব্যয় হল; তা সংশ্লিষ্ট সকলকে জানাতে হবে। সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।’
জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহানের সভাপতিত্বে ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিন্টু চৌধুরীর পরিচালনায় এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী নুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা, পিডিবি’র তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার) এস.এম ইকবাল, হবিগঞ্জ পিডিবি’র নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ, হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জি.এম মোতাহার হোসেন, হবিগঞ্জ টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন সভাপতি শাকিল চৌধুরী, সাবেক সভাপতি প্রদীপ দাশ সাগর, দৈনিক হবিগঞ্জ সমাচার পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক দিদার এলাহী সাজু, এসএ টিভির জেলা প্রতিনিধি আব্দুর রউফ সেলিম, দৈনিক জনকণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি মামুন চৌধুরীসহ বিভিন্ন দপ্তরের সরকারী কর্মকর্তা, বিদ্যুৎ গ্রাহক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, ‘প্রায়ই গাছ-পালা কাটার নামে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। এতে ভোগান্তি পোহাতে হয় গ্রাহকদের।’ তিনি এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘অধিক পরিমাণ জনবল নিয়োগ দিয়ে শীত মৌসুমে গাছ-পালা কাটার কাজ সম্পন্ন করা হলে; ঝড়-বৃষ্টির মৌসুমে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ভোগান্তি থেকে গ্রাহকরা রক্ষা পাবেন।’
মতবিনিময় সভায় ভুতুড়ে বিল বিষয়ে একাধিক বিদ্যুৎ গ্রাহকের তোপের মুখে পড়েন নির্বাহী প্রকৌশলী। গ্রাহকদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি এলোমেলো ও অগোছালো জবাব দেন। সেচ প্রকল্পের এক বিদ্যুৎ গ্রাহক অভিযোগ করে জানান, তার প্রতি মাসে ৩ লাখ টাকার মতো বিল আসত। হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই সেই বিল ১১ লাখে উঠে। এমন ভুতুড়ে বিল নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। একপর্যায়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তার নামে মামলা দেয়া হয়। আরেক গ্রাহক জানান, তার প্রতি মাসে বিল আসতো ৩ হাজার টাকা। হঠাৎ সে বিল বেড়ে ১২ হাজার টাকা হয়ে যায়। পিডিবি’র নাম্বারগুলোও যেন ‘রাজা-বাদশার’ নাম্বার। জরুরী প্রয়োজনে ফোন দেয়া হলে অধিকাংশ সময়ই রিসিভ করা হয় না অথবা বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, প্রতি শনিবার রক্ষণাবেক্ষণের নামে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। সারা বছর ধরে তারা কি রক্ষণাবেক্ষণ করেন, তা কেউ জানে না। ভুতুড়ে বিলের অভিযোগের জবাবে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। প্রয়োজনে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেয়া হবে।
মতবিনিময় সভায় পিডিবি’র কর্মকর্তারা জানান, হবিগঞ্জ পিডিবি’র ৭টি ফিডার রয়েছে। জি.আই.এস সাব-স্টেশন চালু হলে নতুন আরও ১২টি ফিডার যুক্ত হবে। সাব-স্টেশনটির কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। নানান জটিলতার কারণে সময় বেশি লেগেছে। চালু করতে আরও প্রায় ১০ মাস সময় লাগতে পারে। এটি বাস্তবায়ন করছে এনার্জি প্লাস নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তারা জানান, পিডিবিতে বর্তমানে সিস্টেম লস এখনও ১৩% এর বেশি। তবে তা দ্রæত কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।